*জলপরীর প্রেমে* পার্টঃ২০ লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)

 *জলপরীর প্রেমে*

পার্টঃ২০

লেখকঃহৃদয় বাপ্পী(পিচ্চি)

।।।।

।।।।

।।।।

আমি নিলার আর জারাকে নিয়ে উপরে উঠলাম।।।কোনো মতে উঠে এসেছি।।।জারা তো জলপরী তার কিছুই হয়নি।।।কিন্তু নিলা বেহুশ হয়ে আছে।।।।মনের মধ্যে টান দিয়ে উঠলো।।।একটা হাহাকার নেমে আসলো।।।ভাবছি হয়তো আর বেচে নেই।

.

--বাপ্পী তুমি শক্ত হও।(জারা)

.

--হুমমম কিন্তু আমি ওর বাবাকে কি বলবো?(আমি)

.

--দেখো এখানে তো তোমার ভুল নাই।।এর পিছনে যার হাত আছে আমরা তার উচিত শিক্ষা দিবো।(জারা)

।।।।

।।।।

হঠাৎ নিলা নরে উঠলো।ওর নরা দেখে আমরা দুজনেই খুব খুশি হলাম।

.

--ওর মুখ থেকে পানি বের করতে হবে।(নিলা)

.

--হুমমম।(আমি)

.

--একটু এদিক সেদিক হলেই কিন্তু কাজ শেষ।(জারা)

.

--হুমমম।(আমি)

।।।।

।।।।

জারা ওর শক্তি ব্যবহার করছে।।।আসতে আসতে সব পানি নিলার মুখ থেকে বাইরে বের হচ্ছে।।।

.

--এখনো তো ওর জ্ঞান ফিরছে না।(জারা)

.

--হুমমম হয় তো শ্বাসনালী আটকে যাচ্ছে।(আমি)

.

--তাহলে মুখে মুখ লাগিয়ে ফুক দাও।(জারা)

.

--তুমি দাও।(আমি)

.

--শত হলেও এখন সে তোমার স্ত্রী।।।ওর জীবন তোমাকেই বাচাতে হবে।(জারা)

.

--কিন্তু তুমি।(আমি)

.

--আমি বলছি না দিতে।।আর তখন ওর কথা মনে নেই।।।ভালোবাসলে আমাদের দুইজনকেই ভালোবাসতে হবে।।।আমি এখন ওর ভাগ বাদ দিয়ে তোমার ভালোবাসা চাই না।(জারা)

.

--জারা।(আমি)

.

--ভুল তোমার দ্বারাই হয়েছে।।হোক সেটা আমাকে বাচানোর জন্য।।।।কিন্তু সেটা সুধরানোর সময় আমরা পেয়েছি।।।আমি অনেক ঋণী নিলার কাছে।(জারা)

.

--আচ্ছা।(আমি)....

।।।।

।।।।

আমি নিলার মুখে মুখ লাগিয়ে ফুক দিলাম।।।কয়েকবার ফুক দেওয়ার পরই নিলা কাশতে শুরু করে দিলো।শোয়া অবস্থায় সে আমাকে জরিয়ে ধরলো।।।

.

--তুমি ঠিক আছো তো।(আমি)

.

--হুমমম।(কান্না মাখা মুখে)

.

--আচ্ছা কান্না কইরো না।।।কিছুই হয় নাই।(আমি এক হাত ওর পিঠে দিয়ে ওকে জরিয়ে নিয়ে বল্লাম)

.

--অনেক বার বেছে গেছি আমরা।।সৈনিকটা মনে হয় জাহাজেই মারা গেছে।।।(জারা)

.

--আমাদের উপরে এভাবে কে হামলা করলো??(আমি)

.

--কারো তো সাহস হওয়ার কথা না।।।তাও আবার জলের মধ্যেই আক্রমন হয়ে গেলো আমাদের উপরে।।।(জারা)

.

--আমার তো মনে হচ্ছে এটা অনেক বড় ষড়যন্ত্র।(নিলা)

.

--আমারও সেটাই মনে হচ্ছে।(আমি)

.

--হুমমম তবে আমাদের মনে হচ্ছে একটু সাবধান হতে হবে।।।যে কোনো সময় হামলা হয়ে যেতে পারে আমাদের উপর।(জারা)

.

--হয়তো আর হামলা হবে না আমাদের উপর।।।কারন যে হামলা তারা করেছে তাতে তারা নিশ্চয় বুঝতে পারছে আমরা মারা গিয়েছি।।।কারন জাহাজ সহ সব জ্বলে গিয়েছে।।।।আর আমি আমার এই নেকলেস টাও খুলে ফেলে দিচ্ছি পানিতে।।।এটা আমাকে রানী আম্মা পরিয়ে দিয়েছিলেন।।।।জলপুরীর প্রতিক এটা।।।এটা এখানে ফেলে দিলেই ওরা বুঝতে পারবে আমি পরে গেছি।(আমি)

.

--হুমমম।।।কিন্তু আমরা কিভাবে বের করবো কে আমাদের উপর হামলা করেছে।(নিলা)

.

--দেখি আমি সেনাপতিকে ফোন করি ওনার দেওয়া ফোন দিয়ে।।(আমি)

।।।।

।।।।

ফোন দিলাম সেনাপতিকে।।।কিন্তু বন্ধ বলছে।হয়তো আমাদের মতো কোনো বিপদে পরেছে সেনাপতি।

.

--ধরছে না।।।।আগে এখান থেকে আমাদের সরতে হবে।।।দেখা গেলো যারা হামলা করেছে তারা আবার এখানে চলে আসলো।(আমি)

.

--হুমমম চলো।।।(নিলা)

.

--দেখো প্রথমত আমাদের এই সব জামা কাপড় চেন্জ করতে হবে।।তোমাদের সাথে যেসব অলংকার রয়েছে সব কিছু চেন্জ করবা।(আমি)

.

--সেগুলো কেনো?(জারা)

.

--কারন হামলা যদি পাতালপুরী থেকে করে থাকে তাহলে নিলাকে ওরা বের করে ফেলতে পারবে।।।আর এতেই আবার আমাদের উপর আক্রমন হতে পারে।।।আর যতক্ষন না পর্যন্ত আমি বের করতে পারছি কে আমাদের উপর হামলা করলো এবং কেনো করলো আমি জলপুরীতে যাচ্ছি না।।।তার আগে তোমাদের নিরাপদ একটা স্থানে রাখতে হবে।(আমি)

.

--হুমমম চলো।(জারা)

।।।

।।।

আমি নিলা আর জারাকে নিয়ে চলে আসলাম একটা বড় মলে।।।।অবশ্য জায়গাটা হচ্ছে লন্ডন।।।।আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী জামা কাপড় নিয়ে নিলাম যেগুলো জারা সেলসম্যানের উপর জাদু করে কিনিয়ে দিলো।।

জামা কাপড় প্রথমত পাল্টিয়ে নিলাম।।।তারপর একটা নিরাপদ জায়গায় চলে আসলাম।।।নিলা একটু আঘাত পেয়েছে।।।জারা ওকে ঠিক করে দিলো পানি দিয়ে।

.

--তোমরা তো পানি দিয়ে অনেক কিছুই করতে পারো।(নিলা)

.

--হ্যা পানিই আমাদের সব।(জারা)

.

--একজন আকাশপরী মায়ের মেয়ে হয়েও আমি কিছুই করতে পারি না।।।আমার তো ডানাটাও নেই।(নিলা)

.

--তুমি কখনো নিজেকে পরী বলে মনে করো না তাই তুমি তোমার শক্তি ব্যবহার করতে পারো না।।।তাছাড়া তুমি মানব-পরী।।।মানে তোমার মধ্যে আকাশপরীদের মতো সব শক্তি এবং মানুষদের মতো বুদ্ধি রয়েছে।।।তুমি নিতান্তই সব পরীদের থেকে শক্তিশালী।(জারা)

.

--হ্যা ঠিক বলেছো কখনো নিজেকে পরী বলে মনে করি নি।।।সব সময় একজন সাধারন মেয়েই ভেবেছি।(নিলা)

.

--দেখবা সময় হলে সবই করতে পারবা।(জারা)

।।।।

।।।।

নিলা আর জারাকে রেখে আমি একটু বাইরে বের হলাম।।।বের হলাম কারন লন্ডন এ আছি।।।একটু হলেও তো ঘুড়ে দেখার মন চাই।।।তাই ঘুরে ঘুরে সেটাই করলাম।।।আবার তো থাকতে হবেনে পানির মধ্যে।।।পৃথিবীর এমন সুন্দর সুন্দর জায়গা ঘোরার সময় কি আর হবে।তাই মন মতো ঘুরো আসলাম।দুই দিন কেটে গেলো।।।সেনাপতির ফোনে কল দিয়েছি কিন্তু শুধু বন্ধই বলতেছে।।।আমি জলপুরীতেও সংযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।।।সব দিক দিয়েই সব কিছু আটকে গেছে।।।আমি তো আর জলপুরীর ঠিকানা জানি না যে সোজা ঔখানে চলে যাবো।।।

আর জলে যাতায়াত এখন সুবিধার নয়।।।।কি করা যায় কিছুই মাথায় আসছে না।।নিলা আর জারা দুজনেই আমার দুইপাশে শুয়ে ঘুমাচ্ছে।।বুঝতেছি না আমি এভাবে কেনো আছি।।।আমি কেনো কিছু করতে পারছি না।।।

হঠাৎ বাইরে বড় পাখির মতো দেখলাম।।।।বুঝে গেছি আকাশপুরীর কেউ হবে।।।।তাই নিলা আর জারাকে এভাবেই রেখে আমি উঠে গেলাম।।।রুমে বারান্দায় চলে আসলাম।।।পরিচিত একটা সুগন্ধ পেলাম।।।।বুঝে গেছি এটা কে?

.

--মোহনা।(আমি)

.

--.....

.

--মোহনা আমি জানি তুমি এখানে।।।আমার সামনে আসো।(আমি)

.

--হুমমম কেমন আছো হৃদয়।(মোহনা)

.

--সবই তো তোমার জন্য হলো।।।ভালো কি থাকতে দিলে।।।এখন আমি হয়তো আমার রাজঘরে থাকতাম জারার সাথে।।।কিন্ত তুমি যা করেছো তা ঠিক করতে গিয়ে এখন আমি রাজা হয়েও ভয়ের মধ্যে আছি।(আমি)

.

--তুমি হয়তো ভয়ের খবর কিছুই জানো না।।।।(মোহনা)

.

--মানে?(আমি)

.

--তোমাকে আমার প্রেমের জালে ফেলে আকাশপুরীতে নিয়ে আসার হুকুম দিয়েছিলেন আমার বাবা আকাশপুরীর রাজা।(মোহনা)

.

--তারমানে এই সব তোমার বাবার চক্রান্ত।।(আমি)

.

--আমিও প্রথমে এটাই ভেবেছিলাম।।।বাবা বলেছিলেন তুমি অনেক বড় একজন যোদ্ধা হবে তোমাকে যদি নিয়ে আমি আসতে পারি তাহলে বাবা তোমার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিবে।।।তখন আমাদের আকাশপুরীর সেনা আরো শক্তিশালী হবে।আমি বাবার এই কথা শুনেই তোমার কাছে এসেছিলাম।।।।বিয়ের কথা শোনার পর থেকেই তোমাকে আসতে আসতে ভালোবেশে ফেলেছিলাম।।।।কিন্তু পরেই আমি আসল ঘঠনা জানতে পারি।(মোহনা)

.

--কি ঘঠনা?(আমি)

.

--এই সব একটা চক্রান্ত।।তোমার সেনাপতি তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকটা করেছে।।।সে আমার বাবার সাথে এক হয়ে গেছে এবং পুরো জাহান তাদের কবজায় করে ফেলতে চাই।।।তারা পাতালপুরীর রাজাকে বন্ধী করে ফেলেছে।এবং পাতালপুরীর রাজা হয়ে গেছে এখন সে নিজেই।(মোহনা)

.

--এসব কি বলছো।।।তাহলে তো আমাকে এখনি জলপুরীর উদ্দেশ্যে বের হতে হবে।(আমি)

.

--তাতেও লাভ হবে না।।তোমার উপরে হামলা করিয়েছিলো সেনাপতি।।।তোমার ঔ নেকলেসটা পেয়ে সবাই প্রমানিত হয়েছে তুমি মারা গিয়েছো।(মোহনা)

.

--সেনাপতি এমন করবে আমি ভাবিও নাই।(আমি)

.

--আর শুনলে অবাক হবে।।।এসবে সেনাপতিকে সাহায্য করেছে কে জানো?(মোহনা)

.

--কে?(আমি)

.

--জলপুরীর রানী।।(মোহনা)

.

--মানে জারার আম্মু।(আমি)

.

--হ্যা তবে এখন তার অন্য পরিচয়।এখন সে রাজা আনিল এর স্ত্রী।(মোহনা)

.

--কি???(আমি)

.

--ব্যাপারটা আমিও গোপন সূত্রে জেনেছি।।।।।হিলোরাস বেচে থাকার আগে থেকেই রানীর অবৈধ্য মেলামেশা ছিলো সেনাপতির সাথে।।।রানীর প্রথম যে বাচ্চা হয় সেটা ছিলো ঔ সেনাপতিরই।।।কিন্তু সবাই ভেবে নিয়েছিলো সেটা টিটান এরই।।(মোহনা)

.

--সেই ছেলে তো মারা গিয়েছিলো?(আমি)

.

--হ্যা গিয়েছিলো।।।সবার কাছে সে মারা গিয়েছিলো।।।কিন্তু সে ছিলো আমাদের এই আকাশপুরীতে।।।তার জন্য একটা পুকুর করেছিলো আমার বাবা।।।সেখানেই সে ছিলো।।।এখন তাকে রাজা বানানো হবে জলপুরীর।।।আর তার সাথে আমার বিয়ে দেওয়া হবে।(মোহনা)

.

--ওওও ভালো।।তাহলে তোমার জীবন তো সুন্দর হবে।।।।আমার কাছে কেনো আসছো।।।।তুমি যাও বিন্দাস লাইফ তো তোমার।(আমি)

.

--আমি এখানে আসছি কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।।।আমি তোমার কাছে থাকতে চাই।(মোহনা)

.

--দেখো সব আমাকে বলেছো সেটার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।।।।সবার কাছে তো আমরা মারা গিয়েছি তাই না।।।এভাবেই থাকি।।।তুমি এখন চলে যাও।।তুমি আমাদের সাথে থাকলে ওরা তোমাকে খুজতে এসে আমাদের পেয়ে যাবে।(আমি)

.

--আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না।(মোহনা)

.

--আমাকে যদি ভালোবেসে থাকো।।।তাহলে হয়তো আমাকে বিপদে ফেলবে না।।।এখন তুমিই ভালো বুঝো।(আমি)

.

--ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।।।হয়তো এপারে তোমাকে পেলাম না।।।কিন্তু ওপারে তোমাকেই আমি পেতে চাই।।।(মোহনা)

।।।।

।।।।

আমার ঠোটে শেষ একটা চুম্বন দিয়ে মোহনা চলে গেলো।।।আমি তার ডানা মেলা দেখতেই থাকলাম।।।আজ রাগ আমি কার উপর করবো।।যেই লোককে বন্ধুর মতো ভেবেছি সে কিনা প্রথম থেকেই আমাকে বিশ্বাস ঘাতকতা করতেছে।।।কিন্তু এসব কিসের জন্য।।।সহজেই তো আমার উপস্থলে ওনার ছেলেকে রাজা বানিয়ে ফেলতে পারতো।।তারপর পাতালপুরীর মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিতো।।।শুধু শুধু আমাকে।।।।

হ্যা এটাও তো হতে পারে।।।আমার দ্বারা সে এই ট্রিশুলটা নিতে চেয়েছিলো।।।হ্যা এটাই হবে হয়তো।।আসল কথাই আমার মাথায় চলে আসছে।কি চাল দিয়েছে।।।এক ঢিলে দুই পাখি মেরে ফেলছে।।।এখন তার ছেলে জলপুরীর রাজা।।।সে নিজে পাতালপুরী দখল করেছে।।আবার আকাশপুরীর রাজকন্যাকে ছেলের বউ করে আকাশপুরীও দখল করে নিবে।।।ভেবেছিলাম শুধু মানুষদের মধ্যেই এই ক্ষমতার লড়াই হয়।।।কিন্তু না জ্বীন-পরীদের মধ্যেও এই ক্ষমতার যুদ্ধ হয় যেটা অনেক ভয়াবহ।

।।।।।

মন্তব্যসমূহ

Archive

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ